P/E Ratio TTM: কি এবং কিভাবে বুঝবেন?

by Alex Braham 37 views

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার সময়, পি/ই রেশিও টিটিএম (P/E Ratio TTM) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এটা আসলে কী, এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এটি কীভাবে কাজে লাগে? আজকের আলোচনায় আমরা এই বিষয়টা বিস্তারিতভাবে দেখব। বিশেষ করে, যারা বাংলা ভাষায় এই বিষয়ে জানতে চান, তাদের জন্য এই আলোচনাটি বিশেষভাবে উপযোগী হবে।

পি/ই রেশিও টিটিএম (P/E Ratio TTM) কী?

পি/ই রেশিও, যার পুরো নাম Price-to-Earnings Ratio, একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম এবং তার earnings-এর মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে। TTM মানে হচ্ছে trailing twelve months, অর্থাৎ গত ১২ মাসের earnings-এর উপর ভিত্তি করে এই রেশিও হিসাব করা হয়। এই রেশিও বিনিয়োগকারীদের বুঝতে সাহায্য করে যে, একটি শেয়ার তার earnings-এর তুলনায় কত দামে বিক্রি হচ্ছে।

সহজ ভাষায় বললে, যদি কোনো কোম্পানির পি/ই রেশিও ২০ হয়, তাহলে এর মানে হলো বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির প্রতি ১ টাকা earnings-এর জন্য ২০ টাকা দিতে রাজি আছে। এই সংখ্যাটি বেশি হলে সাধারণত ধরে নেওয়া হয় যে শেয়ারটি overpriced, আর কম হলে underpriced। তবে, শুধু এই একটি রেশিওর ওপর নির্ভর করে বিনিয়োগ করা উচিত নয়।

পি/ই রেশিও টিটিএম কেন গুরুত্বপূর্ণ?

  • কোম্পানির মূল্যায়ন: পি/ই রেশিও ব্যবহার করে একটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য কত হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
  • তুলনামূলক বিশ্লেষণ: একই সেক্টরের অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, কোনো কোম্পানির শেয়ার overpriced নাকি underpriced।
  • বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত: বিনিয়োগকারীরা এই রেশিও ব্যবহার করে তাদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

কিভাবে পি/ই রেশিও টিটিএম হিসাব করা হয়?

পি/ই রেশিও টিটিএম হিসাব করার জন্য দুটি জিনিস প্রয়োজন:

  1. কোম্পানির বর্তমান শেয়ারের দাম (Current Market Price)
  2. গত ১২ মাসের earnings per share (EPS)

ফর্মুলা:

পি/ই রেশিও = শেয়ারের বর্তমান দাম / EPS (TTM)

উদাহরণস্বরূপ, ধরুন একটি কোম্পানির শেয়ারের বর্তমান দাম ১০০ টাকা, এবং গত ১২ মাসের EPS হলো ৫ টাকা। তাহলে, পি/ই রেশিও হবে:

পি/ই রেশিও = ১০০ / ৫ = ২০

এর মানে হলো, বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির প্রতি ১ টাকা আয়ের জন্য ২০ টাকা দিতে প্রস্তুত।

পি/ই রেশিও টিটিএম-এর সুবিধা এবং অসুবিধা

যেকোনো বিচারধারার মতোই, পি/ই রেশিও টিটিএম-এর কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

সুবিধা:

  • সহজে বোধগম্য: এই রেশিওটি বোঝা এবং ব্যবহার করা সহজ।
  • তুলনামূলক বিশ্লেষণ: বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে তুলনা করার জন্য এটি একটি উপযোগী হাতিয়ার।
  • ঐতিহাসিক তথ্য: যেহেতু এটি গত ১২ মাসের earnings-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি, তাই এটি কোম্পানির পূর্বের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা দেয়।

অসুবিধা:

  • ভবিষ্যতের পূর্বাভাস নয়: এটি শুধুমাত্র অতীতের তথ্য দেয়, ভবিষ্যতের earnings সম্পর্কে কোনো ধারণা দেয় না।
  • ক্ষেত্র বিশেষে পরিবর্তনশীল: বিভিন্ন সেক্টরের কোম্পানির জন্য এই রেশিওর মান বিভিন্ন হতে পারে।
  • অস্বাভাবিক ঘটনা: কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলে (যেমন, কোনো বড় ধরনের লাভ বা ক্ষতি), এই রেশিও ভুল ধারণা দিতে পারে।

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পি/ই রেশিও টিটিএম-এর ব্যবহার

বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, পি/ই রেশিও টিটিএম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নিচে এর কয়েকটি ব্যবহার আলোচনা করা হলো:

১. কোম্পানির মূল্যায়ন

পি/ই রেশিও ব্যবহার করে আপনি বুঝতে পারবেন যে কোনো কোম্পানির শেয়ার তার আয়ের তুলনায় কত দামে বিক্রি হচ্ছে। যদি রেশিও বেশি হয়, তাহলে শেয়ারটি সম্ভবত overpriced, আর যদি কম হয়, তাহলে underpriced হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি কোম্পানির পি/ই রেশিও ৩০ হয় এবং একই সেক্টরের অন্য কোম্পানির রেশিও ২০ হয়, তাহলে প্রথম কোম্পানির শেয়ারটি তুলনামূলকভাবে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

২. তুলনামূলক বিশ্লেষণ

একই সেক্টরের বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে তুলনা করার জন্য পি/ই রেশিও একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কোন কোম্পানির শেয়ার সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে।

মনে করুন, দুটি টেকনোলজি কোম্পানির মধ্যে একটির পি/ই রেশিও ১৫ এবং অন্যটির ২৫। সেক্ষেত্রে, প্রথম কোম্পানির শেয়ারটি বিনিয়োগের জন্য ভালো সুযোগ হতে পারে, যদি অন্য কোনো সমস্যা না থাকে।

৩. বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত

পি/ই রেশিও অন্যান্য আর্থিক অনুপাতের সাথে মিলিয়ে দেখলে, এটি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হতে পারে। শুধুমাত্র এই একটি রেশিওর উপর নির্ভর করে বিনিয়োগ করা উচিত নয়, বরং আরও কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত।

যেমন, কোম্পানির ঋণ, বৃদ্ধির সম্ভাবনা, এবং ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা ইত্যাদিও দেখা উচিত।

পি/ই রেশিও টিটিএম ব্যবহারের কিছু টিপস

পি/ই রেশিও টিটিএম ব্যবহার করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার। নিচে কয়েকটি টিপস দেওয়া হলো:

১. সেক্টর বিবেচনা করুন

বিভিন্ন সেক্টরের কোম্পানির পি/ই রেশিও আলাদা হতে পারে। তাই, একই সেক্টরের কোম্পানির সাথে তুলনা করুন। উদাহরণস্বরূপ, টেকনোলজি কোম্পানির পি/ই রেশিও সাধারণত ইউটিলিটি কোম্পানির চেয়ে বেশি হয়।

২. ঐতিহাসিক তথ্য দেখুন

কোম্পানির ঐতিহাসিক পি/ই রেশিও দেখে বর্তমান রেশিওকে তুলনা করুন। যদি বর্তমান রেশিও তার স্বাভাবিক গড়ের চেয়ে অনেক বেশি হয়, তাহলে শেয়ারটি overpriced হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৩. অন্যান্য অনুপাত ব্যবহার করুন

পি/ই রেশিওর সাথে আরও কিছু আর্থিক অনুপাত যেমন debt-to-equity ratio, price-to-book ratio, এবং dividend yield ব্যবহার করুন। এতে আপনি কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাবেন।

৪. ভবিষ্যৎ বৃদ্ধির সম্ভাবনা বিবেচনা করুন

পি/ই রেশিও শুধুমাত্র অতীতের কর্মক্ষমতা দেখায়, ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নয়। তাই, কোম্পানির ভবিষ্যৎ বৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং ইন্ডাস্ট্রির ট্রেন্ডগুলো বিবেচনা করুন।

উপসংহার

পি/ই রেশিও টিটিএম একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক অনুপাত, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক হতে পারে। এটি ব্যবহার করে কোম্পানির মূল্যায়ন করা, তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা, এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। তবে, শুধুমাত্র এই একটি রেশিওর উপর নির্ভর করে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। অন্যান্য আর্থিক তথ্য এবং কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিবেচনা করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

আশা করি, এই আলোচনাটি আপনাদের পি/ই রেশিও টিটিএম সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দিতে পেরেছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও কোনো প্রশ্ন থাকলে, অবশ্যই জিজ্ঞাসা করুন।